marquee

“সুবহানাল্লাহ - ওয়াল হামদুলিল্লাহ - ওয়া লা-ইলাহা ইলল্লাল্লাহু - আল্লাহু আকবার”

Navigation Menu

গীবত গীবত কত প্রকার | গীবত সম্পর্কে কুরআনের আয়াত

লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ(সা:)


গীবতি
গীবতের প্রকারভেদ ও ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি”

গীবত

হযরত আবু সায়ীদ (রা) হইতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “গীবত ব্যভিচার হতেও জঘন্য ।”(বায়হাকী) গীবত—এই একটি শব্দেই লুকিয়ে আছে অগণিত পাপের চাবিকাঠি। রাসূলুল্লাহ (সা.) গীবতকে ব্যভিচারের চেয়েও জঘন্য বলেছেন। কারণ,

গীবত মানুষের হক, আর যেহেতু হক্বের ব্যাপারে আল্লাহর ক্ষমা পাওয়া কঠিন, তাই গীবতকারী যতই ইসতেগফার করুক, যার গীবত করা হয়েছে সে ক্ষমা না করলে তা ক্ষমাযোগ্য নয়।


গীবত কাকে বলে

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- গীবত কাকে বলে, তোমরা তা জান কি? সাহাবীগণ(রা:) বললেন, “আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই ভালো জানেন। তিনি বললেন, তোমার কোনো দ্বীনি ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে, তাই গীবত।”

রাসূল (সা.) বলেছেন, “তোমার ভাই সম্পর্কে এমন কিছু বলা, যা সে অপছন্দ করে, সেটাই গীবত।” (মুসলিম)মানুষ যখন আত্মপূজায় ডুবে যায়, নিজেরে বড় ভাবতে শুরু করে, তখনই গীবতের বীজ বপন হয়। হিংসা, কুধারণা, অহংকার—সবই গীবতের দিকে ঠেলে দেয়। অথচ সত্যিকারের মানুষ সে-ই, যে নিজের জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।

গীবত কত প্রকার

গীবত, অর্থাৎ অন্যের পেছনে তার অপছন্দনীয় কথা বলা—ইসলামে এটি সম্পূর্ণরূপে হারাম। শুধু গীবত করাই নয়, গীবত শোনাও হারাম। অথচ আমরা অনেকেই এটিকে তেমন বড় গোনাহ ভাবি না। মজার ছলে, হাসির ছলে, “ভালোবাসার মানুষ” বলে কিংবা “সচেতনতা” নামে—আমরা দিব্যি গীবত করে যাই!

গীবত এতটাই ভয়ংকর, যে বিচার দিবসে যার গীবত করেছি, তাকে আমাদের নেক আমল দিয়ে ক্ষতিপূরণ করতে হবে! আর যদি আমল না থাকে? তাহলে তার গোনাহ আমাদের ঘাড়ে উঠবে। ভাবুন তো—এ কেমন লেনদেন?
ইসলামী ব্যাখ্যায় গীবত ৮ প্রকার:

  • শারীরিক গীবত
  • পোশাক নিয়ে গীবত
  • বংশ-পরিচয় নিয়ে গীবত
  • পাপাচার তুলে গীবত
  • বদঅভ্যাস নিয়ে গীবত
  • প্রত্যক্ষভাবে গীবত
  • আকার-ইঙ্গিতে (পরোক্ষ) গীবত

এমনকি মৃত ব্যক্তিকেও ছাড় দেওয়া হয়নি—তাদের নিয়েও গীবত হারাম। আমরা যদি কাউকে সংশোধন করতে চাই, তবে তা তার সামনেই বলতে হবে—পেছনে নয়। কারণ, গীবত কোনোভাবেই “ভালো উদ্দেশ্যে” জায়েয নয়।

গীবত মানুষের হৃদয়ে বিষ ঢালে, সম্পর্ক নষ্ট করে, সমাজে বিভাজন তৈরি করে। তাই আসুন, আমরা নিজেরা গীবত থেকে দূরে থাকি এবং অন্যকেও বিরত রাখি।মনে রাখুন, জিহ্বার নিয়ন্ত্রণ না থাকলে, জান্নাতের পথও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।

সালাত আদায়ের গুরুত্ব ! সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম

গীবত সম্পর্কে কুরআনের আয়াত

গীবত—এটি শুধু মুখের পাপ নয়, এটি অন্তরের পচন। এটি এমন এক ভয়াবহ গোনাহ, যা নীরব ঘাতকের মতো আমাদের নেক আমলগুলো নিঃশেষ করে দেয়—আর আমরা টেরই পাই না!

গীবত এমন একটি পাপ যা চুরি, ডাকাতি, সুদ, ঘুষ, ব্যভিচার এমনকি মরা মানুষের পচা গোশত খাওয়ার চেয়েও জঘন্য। বিস্ময়কর হলেও সত্য, আমরা প্রতিনিয়ত এই পাপে জড়াচ্ছি — হাসতে হাসতে, গল্প করতে করতে, মজা করতে গিয়েও!

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন:"তোমরা একে অন্যের গীবত কোরো না। তোমাদের কেউ কি চায় তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে? নিশ্চয়ই তোমরা তা ঘৃণা করো।"(সূরা হুজুরাত: ১২)

আর সূরা হুমাযাহ-তে আল্লাহ সাবধান করেছেন“দুর্ভোগ প্রত্যেকের জন্য, যারা লোকদের পিছনে নিন্দা করে, সম্মুখে উপহাস করে... তাদের স্থান হবে জ্বলন্ত হুতামায়।”

গীবত শুধুই মুখের দোষ নয়—এটি অন্তরের রোগ। এই রোগ জন্ম নেয় হিংসা, অহংকার ও কুধারণা থেকে। তাই আল্লাহ আমাদের সতর্ক করেছেন অনুমান করা, গোপন খোঁজ নেওয়া, ও পরনিন্দা থেকে।

গীবত সম্পর্কে হাদিস

গিবত আজকাল অনেকের মুখের স্বাদ হয়ে উঠেছে। মুসলিম সমাজে এই মারাত্মক গোনাহ এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে, মানুষ তা গোনাহই মনে করে না। অথচ গীবত এমন একটি জঘন্য পাপ, যা মানুষের সম্মান ও আখিরাত—দুইটাই ধ্বংস করে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা কি জানো গীবত কাকে বলে?” সাহাবাগণ বললেন, “আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভালো জানেন।” তিনি বললেন, “তোমার ভাই যা অপছন্দ করে, তা তার অনুপস্থিতিতে বলাই গীবত।”আর যদি সেই দোষ তার মাঝে না থাকে, তাহলে তা অপবাদ।(মুসলিম: ২৫৮৯)

আরও ভয়াবহ হাদিসে এসেছে “সূদের ৭৩টি স্তরের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্তর হলো নিজের মায়ের সাথে ব্যভিচার করার মতো, আর সবচেয়ে উঁচু স্তর হলো কারও মান-সম্মান নষ্ট করা।” (সহিহ সূত্রে বর্ণিত) আমরা অনেক সময় এমন মজলিসে বসে থাকি যেখানে গিবত হয়, আর আমরা চুপ করে থাকি। অথচ হাদিসে এসেছে
“যে ভাইয়ের গীবত হচ্ছে, তার পক্ষ নেওয়া ফরজ। সেই গিবতের প্রতিবাদ না করলে, আমরাও গোনাহে শরিক হবো।”

শেষ কথা :

আসুন আমরা প্রতিজ্ঞা করি কারো পিছনে গীবত করবো না গীবত শুধু মুখের একটি কথা নয়, এটি হৃদয়ের রোগ, যার শিকড় হিংসা, অহংকার ও কুধারণায়। আমাদের উচিত এই ভয়াবহ অভ্যাস থেকে ফিরে আসা, নফসকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং অন্যের মান-মর্যাদা রক্ষায় এগিয়ে আসা।মহান আল্লাহ আমাকে এবং আপনাদেরকে গীবত থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন আমীন ।

গীবত সম্পর্কে প্রশ্নোত্তর (FAQ)

গীবত সম্পর্কে আল্লাহ কি বলেছেন?

আল্লাহ তায়ালা কুরআনে গীবতের ব্যাপারে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেনঃ
“তোমরা একে অপরের গীবত কোরো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? নিশ্চয়ই তোমরা একে ঘৃণা করবে।”
(সূরা হুজুরাত, আয়াত: ১২)
এই আয়াত প্রমাণ করে, গীবত কতটা ঘৃণিত কাজ, যা এক মুসলিমের জন্য সম্পূর্ণ হারাম।

ইসলামী শরীয়তে গীবতের হুকুম কি?

ইসলামী শরীয়তে গীবত সম্পূর্ণরূপে হারাম এবং এটি কবিরা গুনাহ। হাদীসে গীবতের তুলনা এমন মারাত্মক পাপের সঙ্গে করা হয়েছে যা একজন ঈমানদার কখনো কল্পনাও করে না। যদি কেউ গীবত করে এবং তওবা না করে, তবে কেয়ামতের দিন তার নেক আমল গীবতভুক্ত ব্যক্তিকে দিয়ে দেওয়া হবে।

পরনিন্দা করলে কী শাস্তি হয়?

হাদিসে এসেছে—
“সূদের ৭৩টি স্তর রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর স্তর হলো, নিজের মায়ের সাথে ব্যভিচার করার সমতুল্য। আর গীবত এই স্তরের কাছাকাছি।”
(সহিহ হাদিস)
এছাড়াও, গীবতের কারণে নামাজ, রোজা ও অন্যান্য ইবাদতের সওয়াব হ্রাস পায় এবং গীবতের শিকার ব্যক্তিকে সেই সওয়াব দিয়ে দেওয়া হয়।

গীবতকে কুরআনে কীসের সাথে তুলনা করা হয়েছে?

কুরআনে গীবতকে তুলনা করা হয়েছে “মৃত ভাইয়ের পচা গোশত খাওয়ার” সঙ্গে। আল্লাহ বলেনঃ
“তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে চাইবে? নিশ্চয়ই তোমরা তা ঘৃণা করবে।”
(সূরা হুজুরাত, আয়াত: ১২)
এই আয়াত থেকে বোঝা যায় গীবত মানুষের আত্মাকে পঁচিয়ে দেয়, আর সমাজে অনৈক্য সৃষ্টি করে।