হজরত সালমান ফারসী(রা:)বলেন,আমি
রাসূলুল্লাহ(সা:)এর নিকট জিঙ্গাসা করিলাম,ঐ ৪০ হাদীস যাহার সম্পর্কে বলা হইয়াছে,যে
ব্যক্তি উহা মুখস্ত করিবে সে জান্নাতে যাইবে উহা কি? রাসূলুল্লাহ(সা:)বলিলেন উহা এই-
১.ঈমান আনিবে আল্লাহর প্রতি অর্থাৎ
তাহার সত্তা ও গুণাবলীর প্রতি।
২.আখেরাতের দিনের প্রতি।
৩.ফেরেশতাগণের অস্তিত্বের প্রতি।
৪.কিতাব সমূহের প্রতি।
৫.সমস্ত নবীগণের প্রতি।
৬.মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত হওয়ার
প্রতি।
৭.তাকদীরের প্রতি অর্থাৎ ভালমন্দ
সব কিছু আল্লাহর পক্ষ হইতে হয়।
৮.অআর এই বিষয়ের সাক্ষ্য দিবে
যে,আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন মাবুদ নাই আর মুহাম্মাদ(সা:)তাহার প্রেরিত সত্য রাসূল।
৯.প্রত্যেক নামাযের সময় পূর্ণ ওযু করিয়া নামায কায়েম করিবে।(পূর্ণ অযূ হইল,যাহার
মধ্যে আদব ও মুস্তাহাব বিষয়সমূহের প্রতি খেয়াল রাখা হয়।আরপ্রত্যেক নামাযের সময় দ্বারা
এইদিকে ইঙ্গত করা হইয়াছে যে,প্রত্যেক নামাযের জন্য নূতন অযু করিবে যদিও পূর্ব হইতে
অযু থাকে।কেননা ইহা মুস্তাহাব। অআর ‘নামায কায়েম করা’ দ্বারা উহার সমস্ত সুন্নত এবং
মুস্তাহাবের এহতেমাম করা উদ্দেশ্য। যেমন অন্য বেওয়াতে বর্ণিত অআছে, জামাতে কাতারসমূহ
সোজা করা,কাতার বাকা না হওয়া ও মধ্যখানে খালি না থাকা ইহাও নামায কায়েম করার অন্তর্ভূক্ত।
১০.যাকাত আদায় করিবে।
১১.রমযানের রোযা রাখিবে।
১২.মাল থাকিলে হজ্জ করিবে অর্থাৎ
যাতায়াত খরচ বহন করার সামর্থ থাকিলে হজ্জ করিবে।যেহেতু অধিকাংশ ক্ষেত্রে মালই না যাওয়ার
কারণ হইয়া থাকে তাই মালের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হইয়াছে। নতূবা উদ্দেশ্য হইল হজ্জের
শর্তসমূহ যদি পাওয়া যায় তবে হজ্জ করিবে।
১৩.দৈনিক ১২ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা
আদায় করিবে।ইহার বিস্তারিত বর্ণনা অন্য হাদিসে এইরুপ আসিয়াছে-ফজরের ফরযের আগে দুই রাকাত,যোহরের
ফরযের আগে চার রাকাত ও পরে দুই রাকাত,মাগরিবের ফরযের পরে দুই রাকাত এবং এশার ফরযের
পরে দুই রাকাত।
১৪.বিতরের নামায কোন রাত্রেই
তরক করিবে না।(যেহেতু এই নামাযের গুরুত্ব সুন্নতে মুয়াক্কাদার চাইতেও বেশী তাই এত তাকিদের
সহিত বলিয়াছেন।)
১৫.আল্লাহর সহিত কোন কিছুকে
শরীক করিবে না।
১৬.পিতামাতার অবাধ্যতা করিবে
না।
১৭.জুলুম করিয়া ইয়াতিমের মাল
খাইবে না।(অথাৎ,যদি কোন কারণে এতীমের মাল খাওয়া জায়েয হয় যেমন কোন কোন অবস্থাতে
হইয়া থাকে তবে কোন দোষ নাই।
১৮.শরাব পান করিবে না।
১৯.যিনা করিবে না।
২০.মিথ্যা মসম খাইবে না।
২১.মিথ্যা সাক্ষ্য দিবে না।
২২.নফসের খাহেশ অনুযায়ী চলিবে
না।
২৩.মুসলমান ভা্ইয়ের গীবত করিবে
না।
২৪.সচ্চরিত্রা মহিলাকে অপবাদ
দিবে না।(এমনিভাবে সচ্চরিত্র পুরুষকে ও না।)
২৫.মুসলমান ভাইয়ের সহিত বিদ্বেষ
রাখিবে না।
২৬.খেলাধুলায় লিপ্ত হইবে না।
২৭.খেল-তামাশায় অংশ গ্রহন করিবে
না।
২৮.কোন খাটো লোককে দোষ বুঝাইবার
উদ্দেশ্যে খাটো বলিবে না।(অর্থাৎ যদি কোন নিন্দাসূচক শব্দ এইরুপ প্রচলিত হইয়া থাকে
যে,উহা বলার দ্বারা দোষ বুঝায় না এবং দোষের নিয়তে বলাও হয় না,যেমন কাহারো নাম বুদ্ধু
বলিয়া প্রচলিত হইয়া গিয়াছে এমতাবস্থায় কোন ক্ষতি নাই।কিন্তু দোষ প্রকাশের উদ্দেশ্যে
এইরুপ বলা জায়েয নাই।
২৯.কাহাকেও উপহাস করিবে না।
৩০.মুসলমানদের মধ্যে চোগলখোরী
করিবে না।
৩১.সর্বাস্থায় আল্লাহ পাকের নেয়ামতের
শোকর আদায় করিবে।
৩২.বালা-মুসীবতে সবর করিবে।
৩৩.আল্লাহর আজাব হইতে নির্ভয়
হইবে না।
৩৪.আত্মীয়-স্বজনের সহিত সম্পর্ক
ছিন্ন করিবে না।
৩৫.বরং তাহাদের সহিত সম্পর্ক
বজায় রাখিবে।
৩৬.আল্লাহর কোন মাখলুককে লা’নত
করিবে না।
৩৭.সুবহানাল্লাহ,আল-হামদুলিল্লাহ,লা-ইলাহা
ইল্লাল্লাহ,আল্লাহু আকবার এর ওযীফা বেশী বেশী পড়িবে।
৩৮.জুমআ এবং দুই ঈদে উপস্থিত
হওয়া ছাড়িবে না।
৩৯.এই এক্কীন ও বিশ্বাস রাখিবে
যে,শান্তি বা কষ্ট যাহা তোমার নিকট পৌছিয়াছে উহা তকদীরে ছিল যাহা হটিবার ছিল না,আর
যাহা পৌছে নাই উহা কখনও পৌছার ছিল না।
৪০.কালামুল্লাহ শরীফের তেলাওয়াত
কখনও ছাড়িবে না।
সালমান ফারসী(রা:)বলেন,আমি রাসূলুল্লাহ(সা:)কে
জিজ্ঞাসা করিলাম,কেহ যদি এই হাদীস মুখস্থ করে তবে তাহার কি সাওয়াব লাভ হইবে?রাসূলুল্লাহ(সা:)উত্তরে
বলিলেন,আল্লাহ তায়ালা আম্বিয়(আ:)এবং ওলামায়ে কেরামের সহিত তাহার হাশর করিবেন।
আল্লাহ তায়ালা যদি আমাদের গোনাহ
মাফ করিয়া আমাদিগকে আপন দয়া ও অনুগ্রহে তাহার নেক বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করিয়া নেন
তবে ইহা তাহার দয়ার কাছে অসম্ভব কিছু নহে। আল্লাহ আমাকে এবং সমস্ত মুসলিম ভাই-বোনদের
তাওফিক দান করুন।সাথে সাথে তাহার পূণ্যশীল বান্দাদের উছিলায় সতকাজ করার ও তাহাদের অনুসরন
করার তওফীক দিন।দ্বীনের প্রচার ও প্রসারের জন্য আমাকে কবুল করুন এবং জ্ঞান দার করুন,আমীন-ছুম্মাআমীন।