সকল
প্রসংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য যিনি অত্যান্ত দয়ালু মেহের বান ।হাজার দরুদ সেই মহামানব
প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ মুস্তফা(সা:)এর প্রতি ।নামজ ফারসী শব্দ আর সালাত আরবী শব্দ ।
আভিধানিক অর্থ দু’আ, তাসবীহ, রহমাত কামনা, ক্ষমা প্রার্থনা করা
ইত্যাদি । নামাজ দ্বীনের দ্বিতীয় খুঁটি , খুঁটি ছাড়া যেমন ঘর হয় না সেরূপ নামাজ
ছাড়াও দ্বীন পরিপূর্ণ হয় না। ঈমান আনার পর আল্লাহর আনুগত্যের রশি গলায় ঝুলানো হলো কি না তার প্রথম পরীক্ষা হয়ে যায় নামাজের মাধ্যমে। আজান হওয়ার সাথে সাথে কালবিলম্ব না করে ঈমান আনয়নকারী ব্যক্তি যখন জামায়াতের সাথে নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে গিয়ে নামাজে শামিল হয়, তখন বোঝা যায়, কালেমাপড়া ব্যক্তিটি আল্লাহর আনুগত্য তথা ইসলামের যাবতীয় অনুশাসন মেনে চলতে প্রস্তুত আছে।বাস্তব জীবনে নিজেকে মুসলমান হিসেবে প্রমাণ করতে চাইলে অবশ্যই নামাজ আদায় করতে হবে। ঈমানের দাবী পূরণের সর্বোতকৃষ্ট মাধ্যম হচ্ছে নামাজ। যার নামাজ নেই তার পরিপূর্ণ ঈমান নেই। আমাদের সমাজে অনেককে বলতে শোনা যায়, নামাজ পড়ছি না কিন্তু আমার ঈমান ঠিকই আছে ।মহান আল্লাহ তা’য়ালার নির্দেশ- “তোমরা নামায সুপ্রতিষ্ঠিত কর এবং
রুকুকারীদের সাথে রুকু কর।(সূরা বাকারা-৪৩)”রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন- “আমাদের এবং কাফিরদের মধ্যে পার্থক্য হলো নামাজ। অতএব যে নামাজ ছেড়ে
দিল সে কুফরী করল। (নাসায়ী)”
দ্বীন
ইসলাম এবং ব্যক্তির মধ্যে নামাজই পার্থক্য করে দেয় । রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) বলেছেন- “ব্যক্তি এবং শির্ক ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হলো
নামাজ ছেড়ে দেয়া। (মুসলিম)”
নবী করিম (সা:) আরো বলেন- “ক্বিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার নামাজের
হিসাব নেয়া হবে। যদি তা যথাযথ হয়, তবে সে সফল হলো এবং মুক্তি পেল। যদি তা সঠিক
না হয় সে ধ্বংস হলো ও ক্ষতিগ্রস্ত হলো। (নাসায়ী)” অসংখ্য হাদিস আছে যা দ্বারা
প্রমানিত যে, নামাজ ছাড়া ইসলামে কোন স্থান নেই ।নামাজের বিকল্প আমলও নেই,যা
আল্লাহর অতি নিকটে বান্দাকে নিয়ে যেতে পারে । হযরত বুরাইদা (রাঃ) বলেন,
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন-“ আমাদের এবং কাফিরদের মধ্যে পার্থক্য হলো নামাজ।
অতএব যে নামাজ ছেড়ে দিল সে কুফরী করল। (নাসায়ী)” আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) কে জিজ্ঞেসা করলাম, কোন আমল আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়? তিনি বললেন- “ওয়াক্তমত সালাত আদায় করা, পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা এবং
আল্লাহর পথে জিহাদ করা। (মুসলিম)”
জামায়াতের সাথে সালাত আদায়ের ফজিলত ও গুরুত্ব :
প্রত্যেক
বালেগ পুরুষের জন্য জামায়াতে সালাত আদায় করা অপরির্হয্য ফরজ কর্তব্য ।জামায়াতে
নামাজ আদায়ের যেমন অনেক ফজিলত আছে তেমনি জামায়াতে নামাজেরও নির্দেশ আছে ।জামায়াতে
নামাজ পড়লে ব্যক্তির পারস্পারিক সম্পর্ক উন্নত হয় । সামাজিক ভাবে একে অপরের সাথে
মহব্বত বৃদ্বি পায় এবং মন প্রান পবিত্র হয় ।এমন কি অচেনা অনেক মানুষের সাথে পরিচয়
হওয়া যায় ।মহান আল্লাহ্ তায়ালা রুকু কারীদের সাথে রুকু (জামাত বন্দী নামাজ)করার
নির্দেশ দিয়েছেন ।হযরত সামোরা বিন যুনদুব (রা:)হইতে বর্ণিত, তিনি
বলেন-“রাসুলুল্লা(সা:) আমাদেরকে নির্দেশ করেন যে,তিনজন মুসল্লী থাকলে যে কোন একজন
সামনে দাড়াবে ।(তিরমিজি)” এক অন্ধ ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা
করলো, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা:) আমার এমন কেউ নেই, যে আমাকে হাত ধরে মসজিদে আনবে।
অতঃপর লোকটি মসজিদে উপস্থিত হওয়া থেকে অব্যাহতি চায় এবং ঘরে নামাজ পড়ার অনুমতি
চায়। তিনি তাকে ঘরে নামাজ পড়ার অনুমতি দিয়ে দেন। অনুমতি পেয়ে লোকটি রওনা করে।
কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা:) তাকে পুনরায় ডেকে পাঠান। সে ফিরে আসে। তিনি তাকে
জিজ্ঞাসা করেন, তুমি কি আজান শুনতে পাও? সে বললো, হ্যাঁ, শুনতে পাই। তিনি বললেন,
তাহলে তুমি মসজিদে উপস্থিত হবে।
হযরত
আনছ (রা:)হইতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা:)ফরমাইয়াছেন-“ যে ব্যক্তি আল্লাহর ওয়াস্তে
চল্লিশ দিন যাবত প্রথম তাকবীরের সহিত জামায়াতে নামাজ পড়িবে তাহার জন্য দুইটি
পরওয়ানা লেখা হইবে ।একটি জাহান্নাম হইতে রক্ষা পাওয়ার ও অপরটি মোনাফেকী হইতে মুক্ত
থাকার ।(তিরমিজি)” হযতর আবদুল্লাহ
ইবনে
ওমর
(রা)
থেকে
বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (সা)
বলেন-“ জামাতে নামাজ পড়ার ফজীলত একা পড়ার চেয়ে সাতাশ গুণ বেশী । (বুখারী ও
মুসলিম)” হুজুর পাক (সা:) বলেন-“এইরূপ দুই ব্যক্তির নামাজ যার মধ্যে
একজন ইমাম হইবে ও অপরজন মুক্তাদি,আল্লাহ তায়ালার নিকট চার ব্যক্তির পৃথক পৃথক
নামাজ হইতে অধিকতর প্রিয় । এইভাবে চার ব্যক্তির জামায়াতের নামাজ আট ব্যক্তির পৃথক
পৃথক নামাজ অপেক্ষা উত্তম । আর আট ব্যক্তির জামায়াতের নামাজ যাদের মধ্যে একজন ইমাম
হইবে আল্লহ পাকের নিকট পৃথক পৃথক একশত ব্যক্তির নামাজ হইতে অধিক পছন্দীয়
।(তিবরানী)”হাজারো ফজিলতের বাণী আছে মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ (সা:)এর মানার জন্য
একটিই হাদিসই যথেস্ট ।
জামায়াতের সাথে সালাত আদায় না করার শাস্তি :
হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-“আমার অন্তর চায় কিছু সংখ্যক যুবককে অনেকগুলি জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ
করিতে আদেশ দেই,তারপর আমি ঐসব লোকের নিকট যাই যাহারা বিনা ওজরে ঘরেই নামাজ আদায় করে
এবং গিয়া তাহার বাড়ী ঘর আগুনে পোড়াইয়া দেই
।(মুসলিম)” মানবতার নবী(সা:)উম্মতের কোনপ্রকার দু:খ-কস্ট বরদাস্ত করতে পারতেন না ।সেই
দয়ার রাসূল (সা:) খোব প্রকাশ করেছেন সেইসব লোকদের প্রতি যাহারা বিনা ওজরে ঘরে বসেই
জামায়াত ব্যতীত সালাত আদায় করে ।অন্যত্র রাসূলুল্লাহ(সা:)বলেন-“ঐ ব্যক্তির কাজ পরিস্কার
জুলুম,কুফর এবং নেফাক ব্যতীত আর কিছুই নহে,যে ব্যক্তি মোয়াজ্জিনের আজান শুনিয়াও জামাতে
হাজির হইল না ।(আহম্মদ)” যাহারা মোয়াজ্জিনের আজান শুনিয়া ও জামায়াতে শরীক হইল না তাদেরকে
মোনাফিকদের কাজের সহিত তুলনা করা হইছে কারন মুসলমানদের দ্বারা জামায়াত তরক হইতেই পারে
না ।
আমাদের যত ওজর কেবলই নামাজের সময়, এই কাপড়-চোপর পাক নেই গোসল
করা লাগবে ইত্যাদি ।অথচ হুজুর পাক (সা:) বলেন-“যে ব্যক্তি আজান শুনিয়া কোনরূপ ওজর ছাড়াই
জামায়াতে শরীক না হয় (বরং আপন স্থানে নামাজ পড়িয়া লয়)তাহার নামাজ কবুল হয় না ।ছাহাবারা(রা:)
আরজ করিলেন! হুজুর (সা:)ওজর বলিতে কি বুঝায়? হুজুর পাক(সা:)উত্তরে বলিলেন,অসুস্থতা
অথবা ভয় ভীতি ।(আবুদাউদ)”সাহাবা আজমাইন(রা:)গন বিভিন্ন অভিমত প্রকাশ করে বলেন, যে ব্যক্তি
আজান শুনিয়াও জামায়াতে শরীক হইল না সে তাহার নিজের মঙ্গল কামনা করিল না সুতরাং তাহার
সহিতও ভাল ব্যাবহার করা হইবে না ।অন্যত্র বলা হইয়াছে,যে ব্যক্তি আজান শুনিয়াও জামায়াতে
শরীক হইল না তাহার কানে গলিত সীসা ভরিয়া দেওয়া হউক,ইহাই তাহার পক্ষে উত্তম ।
হযরত ওমর(রা:)বলেন,আমার নিকট
সারারাত্রি নফল পড়ার চেয়ে ফজরের জামায়াতে শরীক হওয়া অধিকতর পছন্দনীয় ।আল্লাহ তায়ালা
সকল মুসলমান ভাইদেরকে তাহার অনুগ্রহে পাচ ওয়াক্ত সালাত জামায়াতের সহিত আদায় করার তাওফিক
দিন ।এবং মা-বোনদেরকে যথাযথ পর্দার সাথে সালাত তথা নামাজ আদায়া করার সুযোগ করে দিন
আমিন । আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাহার অনন্ত অসীম রহমতের মাধ্যমে আমার মন্দ কাজ সমূহ
গোপন রাখুন এবং নেক কাজ করার তওফীক দান করুন।সাথে সাথে তাহার পূণ্যশীল বান্দাদের উছিলায়
সতকাজ করার ও তাহাদের অনুসরন করার তাওফীক দিন।দ্বীনের প্রচার ও প্রসারের জন্য আমাকে
কবুল করুন এবং জ্ঞান দান করুন,আমীন-ছুম্মাআমীন।