সকল প্রসংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য যিনি অত্যান্ত দয়ালু মেহের বান ।হাজার দরুদ সেই মহামানব প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ মুস্তফা(সা:)এর প্রতি ।জীবন চলার পথে আমাদের ইচ্ছকৃত বা অনিচ্ছাকৃত গোনাহ হয়েই যায় । কোন কোন ক্ষেত্রে তো কবিরা গোনাহ হয়ে যায় । হযরত আনাছ(রা:)হতে বর্ণিত,হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাল্লাম বলেন-প্রত্যেক আদম সন্তানই অপরাধী,আর উত্তম অপরাধী তারাই যারা তওবা করে ।(তিরমিযী,ইবনে মাজাহ)
ছগিরা(ছোট)গোনাহ বান্দার নেক
আমল দ্বারা মাফ হলেও কবিরা গোনাহ একান্ত অনুতাপ বা তওবা ব্যতিত আল্লাহ মাফ করেন না
। তওবার আবিধানিক অর্থ হলো অনুতপ্ত হওয়ে ফিরে আসা ।যে মন্দ কাজে লিপ্ত ছিলাম তা হতে
অনুতপ্ত মনে স্থায়ী ভাবে ফিরে আসা যাতে করে ঐ কাজ আমার দ্বারা আর কখনো না হয় সে দিকে
সজাগ দৃষ্টি রাখা ।ঘটনা ক্রমে যদি আবারো হয়েও যায় সাথে সাথে তওবা ইস্তেগফার করা উচিৎ
।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন-“হে
ঈমানদার ব্যক্তিরা, তোমরা(নিজেদের গোনাহর জন্যে)আল্লাহর দরবারে তওবা কর –একান্ত খাটি
তওবা; আশা করা যায় তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের গোনাহ সমূহ ক্ষমা করে দিবেন এবং তোমাদেরকে
প্রবেশ করাবেন জান্নাতে যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত ।”(তাহরীম-৮)
আমাদের ঈমান র্দুবল এবং শয়তানের
প্রভাব প্রবল তাই বার বার অন্যায় হতে পারে তবে পারত পক্ষে না হয় তার প্রতি লক্ষ রাখা
চাই ।যারা শত চেষ্টা করেও শয়তানের ধোকায় বারং বার পরে যায় এবং আবারো ইস্তেগফার করে
আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে চায় তাদের জন্য আল্লাহ তায়ালা বলেন-“আল্লাহ তাদের(তওবাকারীদের)গুনাহকে
পুণ্য দ্বারা পরিবর্তিত করে দেন ।”(ফুরকান—৭০)
হযরত আবু হুরায়রা(রা:)তার একটি
ঘটনা বর্ণনা করেন যে,একদা আমি হুজুর(সা:)এর সাথে ইশার নামায আদায় করার পর বাহিরে বের
হলাম এমন সময় একজন মহিলা আমার সামনে দাড়িয়ে জিঞ্জাসা করলো,হে আবু হুরায়রা!আমি গোনাহ
করেছি,পাপে লিপ্ত হয়েছি,আমার জন্য কি তওবা ও পাপ মোচনের কোন উপায় আছে? আমি তাকে জিঞ্জাসা
করলাম, তুমি যে পাপটি করেছো তা কি? সে বললো, আমি ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছি এবং আমার এই
দুস্কর্মের ফলে যে সন্তান হয়েছে তাকেও হত্যা করেছি ।অত:পর আমি তাকে বললাম-তুমি নিজেও
ধবংস হয়েছো এবং অপর একটি নিস্পাপ সন্তানকেও ধবংস করেছো ।আল্লাহর কসম, এহেন পাপকার্যের
পর তোমার কোন তওবা নেই ।
একথা শুনে মহিলাটি অঞ্জান হয়ে
মাটিতে পড়ে গেল ।তাকে এভাবেই রেখে আমি সেখান থেকে চলে গেলাম । কিন্তু অন্তরে অন্তরে
চিন্তা করতে লাগলাম, মহিলার প্রশ্নের উত্তর তো আমি দিয়ে দিলাম; কিন্তু রাসুলুল্লাহ(সা:)আমাদের
মাঝে বিদ্যমান থাকা সত্বেও বিষয়টি তাকে জিঞ্জাসা করলাম না ।অত:পর আমি হুজুর(সা:)এর
খেদমতে উপস্থিত হয়ে বিষয়টি খুলে বললাম ।আমার বিবরণ শুনে হুজুর(সা:)বললেন-হে আবু হুরায়রা!
তুমি নিজেও ধবংস হলে এবং অপরকেও ধবংস করলে ।তুমি কি কুরআনের এ আয়াতটি তিলাওয়াত কর নাই?
“এবং যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের ইবাদত করে না আল্লাহ্ তাদের পাপসমুহকে পুণ্যের
দ্বারা পরিবর্তিত করে দেন।(ফুরকান:৬৮-৭০)”
হযরত আবু হুরায়রা(রা:)বলেন-অত:পর
আমি চরম হতাশ ও উদ্বিগ্ন হয়ে সেই মহিলাকে এমনভাবে তালাশ করতে লাগলাম যে,লোকেরা আমাকে
উন্মাদ বলতে লাগলো ।অবশেষে আমি তাকে খুজে বের করতে সমর্থ হয়েছি ।তারপর হুজুর(সা:)কর্তৃক
বিবৃত সঠিক মাসআলা সম্পর্কে তাকে অবহিত করি ।তাতে সে আনন্দের আতিশয্যে সজোরে হেসে উঠলো
এবং একটি বাগান আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের জন্য ওয়াকফ করে দিল ।
অতত্রব হে ঈমানদার ভাই বোনেরা
হতাশ না হয়ে আসুন আল্লাহর ওয়াদার প্রতি আস্থারেখে আপ্রান চেষ্টা করি যাতে আমাদের দ্বারা
গোনাহ না হয় ।তারপর ও যদি শয়তানের ধোকায় পরে যাই সাথে সাথে ইস্তেগফার করতে যেন না ভুলে
যাই ।হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে বুসর(রা:)হইতে বর্ণিত-হুজুর(সা:)বলেন, আনন্দ তার জন্য যার
আমলনামায় বেশী ইস্তেগফার পাওয়া যাবে ।(আবু দাউদ)
আল্লাহ
আমাকে এবং সমস্ত মুসলিম ভাই-বোনদের আমল করার তাওফিক দান করুন।সাথে সাথে তাহার পূণ্যশীল
বান্দাদের উছিলায় সৎকাজ করার ও তাহাদের অনুসরন করার তাওফীক দিন।দ্বীনের প্রচার ও প্রসারের
জন্য আমাকে কবুল করুন এবং জ্ঞান দান করুন,আমীন-ছুম্মাআমীন।