সকল প্রসংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য
যিনি অত্যান্ত দয়ালু মেহের বান ।হাজার দরুদ সেই মহামানব প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ মুস্তফা(সা:)এর
প্রতি । মহান আল্লাহ্ তায়ালা কি সবখানে বা র্সবত্র বিরাজমান এই প্রশ্নকে কেন্দ্র করে অধিকাংশ মুসলমানদের মধ্যে রয়েছে একটি
মারাত্মক বিভ্রান্তি । কোরআন ও সহীহ হাদীসে এ ব্যাপারে স্পষ্ট বক্তব্য এসেছে , তবুও
না জানার কারণে মুসলমানদের মধ্যে বিভ্রান্তি বিরাজ করছে যা অন্য ধর্মবলম্বীদের মতবাদের
সাদৃস্য ।সপ্ত আ সমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে সমস্ত কিছুই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের
। অনেকে বলে থাকেন যে , মহান আল্লহ তা’য়ালা সর্বত্র বিরাজমান এবং হাজির নাজির। এই ধারণা
ও বিশ্বাস সঠিক নয়, কোরআন ও হাদীসের বিপরীত । কোরআন -হাদীসের দৃষ্টিতে সঠিক কথা হলো
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অবস্থান আরশের ওপর কিন্তু তিনি তাঁর অসীম জ্ঞান ,ক্ষমতা ও
কুদরতের মাধ্যমে সর্বত্র বিরাজমান ।
তিনি
সত্তাগতভাবে সর্বত্র বিরাজমান নন বিরাজমান কেবলই তার জ্ঞান ,ক্ষমতা ও কুদরতর । তিনি কোথায় আছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতা’য়ালা নিজের
অবস্থান সম্পর্কে বলেছেন যে, তিনি আরশে আযীমে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। মহাবিশ্ব সৃষ্টির
প্রসঙ্গ উল্লেখ র্পূবক মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন- এরপর স্বীয় আরশের ওপর আসীন হয়েছেন । (সূরা আল
আ’রাফ -৫৪ ) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসল্লাম বলেছেন - নিশ্চয়ই
আল্লাহ তা’য়ালা নিজ আরশের ওপর রয়েছেন । তাঁর আরশ হচ্ছে সমস্ত আকাশের ওপর । (আবু
দাউদ )
নবী করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত মুয়াবিয়া ইবনে হাকাম আসলামী রাদিয়াল্লাহু
তা’য়ালা আনহুর দাসীকে প্রশ্ন করলেন -বলো আল্লাহ তা’য়ালা কোথায় ? দাসী জবাব দিলো
আল্লাহতা’য়ালা আকাশের ওপর ।তিনি পুনরায় সেই দাসীকে প্রশ্ন করলেন বলো আমি কে ?দাসী
জাবাব দিলো আপনি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত রাসূল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন হযত মুয়াবিয়া ইবনে হাকামকে আদেশ দিলেন এই দাসীকে মুক্ত করে
দাও। কারণ সে ঈমানদার (মুসলিম ) এই একই বিষয় আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কোরআনের সূরা
ইউনুস ,সূরা রা’দ ,সূরা ত্বাহা , সূরা ফোরকান ,সূরা সিজদা ও সূরা হাদীদে উল্লেখ
করেছেন। সমস্ত কিছু সৃষ্টি করার পর তিনি আরশে সমাসীন হয়েছেন -আল্লাহ তা’য়ালার এ
কথার বাস্তব রূপ অনুধাবন করা কোন মানুষের পক্ষে কক্ষণই সম্ভব নয়।
তবে একটি
বিষয় আল্লাহ তা’য়ালা এই কথার মাধ্যমে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, এই মহাবিশ্ব এবং এর
বাইরে যা কিছু রয়েছে ,এসব সৃষ্টি করে আল্লাহ তা’য়ালা ক্লান্ত হয়ে পড়েননি বা তিনি
সৃষ্টি কাজ সমাপ্ত কের তাঁর সৃষ্টি থেকে তিনি সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেননি। তিনি
নিজের সৃষ্টি সম্পর্কে অচেতন , বেখবর ,অসজাগ ,অসতর্ক বা দৃষ্টি ফিরিয়ে নেননি। অথবা
সৃষ্টি করে তিনি তার সৃষ্টি জগৎ পরিচালনার দায়িত্ব ও কারো প্রতি অর্পন করেনি। এই
বিষয়টি স্পষ্ট করে দেয়ার লক্ষেই তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে,তিনি আরশে সমাসীন হয়েছেন ।
অর্থাৎ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন গোটা মহাবিশ্বেও শুধুমাত্র সৃষ্টি কর্তাই নন,
তিনি এই মহাবিশ্বেও প্রতিপালক ,নিয়ন্ত্রক ,ব্যবস্থাপক ,পরিচালক ,পর্যবেক্ষক ,সমস্ত
সৃষ্টির প্রয়োজন পূরণকারী ,আবেদন শ্রবণকারী, দোয়া কবুলকারী এবং সম্স্ত সৃষ্টির
প্রয়োজনীয় আইন কানুন ও বিধান দানকারী।
আল্লাহতা’য়ালা
কয়েকটি স্তরের মহাবিশ্ব সৃষ্টি করে আরশে সমাসীন হয়েছেন এই কথার মধ্য দিয়ে মহান
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পৃথিবীর মানুষের কাছে এ কথা স্পস্ট করে দিয়েছেন যে ,তাঁর
সৃষ্টি কাজে যেমন কারো কোনো অংশীদার ছিলনা ,অনুরূপভাবে সৃষ্টি কাজের পরিচালন
,প্রতিপালন ও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে কারো সমান্যতম অংশীদারিত্ব নেই। তাঁর আরশ বা
সিংহাসন যা সমস্ত সৃষ্টির কেন্দ্রে ,সেখানে থেকেই তিনি সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রণ
করছেন। মানুষকেও তিনি স্বাধীন ক্ষমতা দিয়ে ছেড়ে দেননি। মানুষের প্রত্যেকটি
স্পন্দনের প্রতি তিনি সজাগ দৃষ্টি রেখেছেন। মানুষের জীবন পরিচালনার জন্য যেসব বিধি
বিধান প্রয়োজন,সে বিধানও তিনি আরশ বা সিংহাসন থেকে অবতীর্ণ করেছেন। সুতরাং মানুষের
স্বেচ্ছাচারী হওয়া বা নিজের ভাগ্যেও মালিক নিজেকে মনে করার কোন অবকাশ নেই এই
কথাটিই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন স্পস্ট করে দিয়েছেন এভাবে যে,তিনি আরশে সমাসীন
হয়েছেন ।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাহার
অনন্ত অসীম রহমতের মাধ্যমে আমার মন্দ কাজ সমূহ গোপন রাখুন এবং নেক কাজ করার তওফীক
দান করুন।সাথে সাথে তাহার পূণ্যশীল বান্দাদের উছিলায় সতকাজ করার ও তাহাদের অনুসরন করার
তওফীক দিন।দ্বীনের প্রচার ও প্রসারের জন্য আমাকে কবুল করুন এবং জ্ঞান দান করুন,আমীন-ছুম্মাআমীন।