সকল প্রসংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য
যিনি অত্যান্ত দয়ালু মেহের বান ।হাজার দরুদ সেই মহামানব প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ মুস্তফা(সা:)এর
প্রতি । হযরত আবু সায়ীদ (রা) হইতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন- “গীবত ব্যভিচার হতেও জঘন্য ।”(বায়হাকী)হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে
মোবারক(রহ:)এর নিকট এক যুবক কাদতে কাদতে আরজ করলো “হুজুর আমি এমন এক গোনাহ্ করেছি
শরমিন্দা হয়ে তা প্রকাশ করতে পারব না ।” হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মোবারক যুবককে বললেন, “আগে বলত তুমি কি কাজ করেছ?”সে
বলল, “আমি যিনা করেছি ।” হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মোবারক বললেন, “আমি তোমার অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে ভাবছিলাম
হয়ত তুমি কারও গীবত করেছ, কেননা গীবত মানুষের হক্ব অথচ যিনাহ্ আল্লাহর হক; সুতরাং
যার গীবত করা হয় সে ব্যক্তি মা’ফ না করলে সে গোনাহ্ মা’ফ হবে না । পক্ষান্তরে
যিনার জন্য আল্লাহ্ তায়ালার দরবারে মনে-মুখে তওবা করলে তিনি হয়ত মা’ফ করতে পারেন
।”(তাযকেরাতুল আউলিয়া-১৫৬) হযরত আনাস(রা:) হইতে বর্ণিত, হুজুর (সা:) বলেন-গীবতের
কাফফারা হল,যার গীবত করা হয়েছে তার মাগফিরাত কামনা করা । (বায়হাকী)
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- গীবত কাকে বলে, তোমরা তা জান কি? সাহাবীগণ(রা:) বললেন,
“আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই ভালো জানেন। তিনি বললেন,
তোমার কোনো দ্বীনি ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে, তাই গীবত।” সাহাবায়ে
কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি যে দোষের কথা বলি তা যদি আমার ভাইয়ের
মধ্যে থাকে তাহলেও কি গীবত হবে? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, “তুমি যে দোষের কথা বল, তা যদি তোমার ভাইয়ের থাকে তবে তুমি অবশ্যই তার
গীবত করলে আর তুমি যা বলছ তা যদি তার মধ্যে না থাকে তবে তুমি তার ওপর মিথ্যা অপবাদ
দিয়েছ।”(মুসলিম)
আমরা সমাজবদ্ব জীবন যাপন করে থাকি আমাদের সমাজে
ধনী-গরীব,শিক্ষিত-অশিক্ষত,কালো-সাদা ইত্যাদি সবধরনের মানুষই বসবাস করে থাকে
।পৃথিবীর আদিথেকেই এই দলবদ্ব সমাজ ব্যবস্থা চালু হয়ে আসছে । মানব সমাজের এই
পার্থক্য সামাজিক ভারসাম্য রক্ষার নিমিত্তেই। যেসব কারণে সমাজের মধ্যে
ভ্রাতৃত্ববোধ বিনষ্ট হয়, সমাজ বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হয়, সামাজিক মূল্যবোধ
বিনষ্ট হয়, পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট হয়, তার মধ্যে অন্যতম কারণ হলো গীবত, যা মানুষকে নিকৃষ্টতম প্রাণীতে পরিণত করে। তাই
তো মহান আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে এই নিকৃষ্ট
স্বভাব থেকে বিরত থাকার তাগিদ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ
করেছেন- “আর তোমরা কেউ কারো গীবত করো না,
তোমরা কি কেউ আপন মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে? একে তোমরা অবশ্যই ঘৃণা
করবে।” (সূরা
হুজুরাত-১২)
সুস্থ, স্বাধীন কোনো বিবেকবান মানুষই জ্ঞান অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত মৃত
মানুষ তো দূরের কথা, যে পশু জীবিত থাকলে হালাল সেই পশু মৃত হলে তার গোশতও ভক্ষণ
করবে না। অথচ মানুষ সুস্থ মস্তিষ্কে স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে গীবতের মতো জঘন্য ফেতনায়
নিমজ্জিত হয় যেন এটা তার কাছে ঘিভাত ।হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) হইতে
বণীত,দুজন রোজাদার আসরের নামাজ পড়ল । তাদেরকে ডেকে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলায়হি
ওয়াসাল্লাম বললেন , যাও পুনরায় অজু কর, নামাজ পড়, রোজা পূর্ণ করে অন্য কোনদিন কাযা
কর ।কারণ তোমরা অমুক ব্যক্তির গীবত করেছ । (বায়হাকী) মানুষ সব সময় নিজেকে বড় করে
দেখে, এই আমিত্বের আরেক নাম আত্মপূজা। এটা শুরু হয়ে গেলে আত্মপ্রীতি মাথাচাড়া
দিয়ে ওঠে। তখন তার আত্মত্যাগের মতো মহত বৈশিষ্ট্য দূরিভূত হতে থাকে। ফলে এ স্থানে
দানা বাঁধে হিংসা-বিদ্বেষ। আবার হিংসা-বিদ্বেষ থেকেই অপরের প্রতি কুধারণার সৃষ্টি
হয়, যা মানুষকে গীবত করতে বাধ্য করে। সুতরাং আত্মপূজা, আত্মপ্রীতি,
হিংসা-বিদ্বেষ, কুধারণাই মানুষকে গীবত করতে বাধ্য করে।
গীবত থেকে বাচার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই বেশী বেশী
ইসতেগফার করা দরকার যাতে দিল নিজেকে অন্যের চেয়ে ছোট দেখতে পায় ।আল্লাহর কাছে
শয়তানের অছওয়াছা থেকে পানাহ্ চাইতে হবে । অপরের কল্যাণ কামনা করা, অপর ভাইকে নিজ
প্রয়োজনের থেকে অগ্রাধিকার দেয়া, অপরের অপরাধকে ক্ষমা করে দেয়া ইত্যাদি মহৎ গুন
অর্জন করার চেষ্টা করতে হবে । যাতে গীবতের সুস্বাধ আমার জিহ্বাহে না লাগতে পারে । রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “যে ব্যক্তি আমার জন্য তার জিহ্বা ও
লজ্জাস্থানের জিম্মাদার হবে, আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হবো।”(বুখারী)
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাহার
অনন্ত অসীম রহমতের মাধ্যমে আমার মন্দ কাজ সমূহ গোপন রাখুন এবং নেক কাজ করার তওফীক
দান করুন।সাথে সাথে তাহার পূণ্যশীল বান্দাদের উছিলায় সতকাজ করার ও তাহাদের অনুসরন করার
তওফীক দিন।দ্বীনের প্রচার ও প্রসারের জন্য আমাকে কবুল করুন এবং জ্ঞান দান করুন,আমীন-ছুম্মাআমীন।